হাইকমিশনার এবং এম্বাসেডর শব্দ দুটি আমাদের কাছে খুবই পরিচিত। কেউ কেউ হয়তো জানি শব্দ দুটি কূটনীতি, পররাষ্ট্রনীতির সাথে সম্পর্কিত। কখনো শোনা যায় বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা এম্বাসেডর এসেছেন, আবার কখনো কানাডিয়ান হাইকমিশনার নিযুক্ত হওয়ার কথা শোনা যায়। দু'জনেই তাদের নিজ নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষায় উক্ত দেশের পক্ষ থেকে নিযুক্ত এবং প্রেরিত। স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর বিভিন্ন দেশে হাইকমিশন বা অ্যাম্বেসি থাকে এবং সেখানে হাইকমিশনার বা এম্বাসেডর নিয়োগ করা হয়ে থাকে মূলত ঐ দেশের স্বার্থ রক্ষায় এবং একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। হাইকমিশনার এবং এম্বাসেডর শব্দ দুটি কূটনীতি বা কূটনীতিক অঙ্গনের সাথে সম্পর্কিত। কূটনীতির ইংরেজি পরিভাষা – Diplomacy আর কূটনৈতিকদের বলা হয় - Diplomat.
পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে বা রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে নিজেদের স্বার্থ কে বা নিজ দেশের স্বার্থকে কে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করে থাকেন তাকে কূটনীতি বলা হয়। আর এ ধরনের সম্পর্ক কে বলা হয় কূটনৈতিক সম্পর্ক, এবং সম্পর্ক স্থাপন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকেন কূটনীতিক বা কূটনীতিবিদ। কূটনীতি বিষয়টি একটা দেশের পররাষ্ট্রনীতির সাথে সম্পর্কিত। পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে যে আলাপ-আলোচনা বা কলাকৌশল প্রয়োগ করা হয় তাকে কূটনীতি বা Diplomacy বলা হয়। কূটনীতি কে বলা হয়ে থাকে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের হাতিয়ার।
হাইকমিশনার কাকে বলে?
একটি দেশ অপর একটি দেশে কূটনৈতিক অফিস বা দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে থাকে এবং সেই দপ্তর কে কখনো হাইকমিশন আবার কখনো অ্যাম্বেসি বলা হয়। যদি কূটনৈতিক সম্পর্ক কমনওয়েলথ ভুক্ত দুটি দেশের মধ্যে হয় এবং এই দুটি দেশের একটি দেশ অন্য দেশে কূটনৈতিক দপ্তর পরিচালনার জন্য কাউকে নিয়োগ দেয় বা পাঠায় তখন তাকে বলা হয় হাইকমিশনার। অর্থাৎ এখানে সম্পর্ক টা হয় কমনওয়েলথ ভুক্ত দুটি দেশের মধ্যে।
এম্বাসেডর বলতে কি বোঝায়?
যদি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন কমনওয়েলথ ভুক্ত দুটি দেশের মধ্যে হয় এবং সেক্ষেত্রে কোন প্রতিনিধি অন্য দেশে পাঠানো হয় কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করতে তখন তাকে বলা হাইকমিশনার কিন্তু যদি দুটি দেশের কোন দেশ কমনওয়েলথ ভুক্ত না হয় এবং তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকে এবং এক দেশ অন্য দেশে কোন প্রতিনিধি নিযুক্ত করে তখন নিযুক্ত ব্যক্তিকেই বোঝানো হয় এম্বাসেডর দিয়ে। অর্থাৎ, তিনি এখানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে এসেছেন।
কখন হাইকমিশনার এবং কখন এম্বাসেডর বলবো বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে বুঝতে চেষ্টা করা যাক -
একটি দেশ থেকে অন্য দেশে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার্থে কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করা হলো। এখন এই ব্যক্তিকে হাইকমিশনার বলবো নাকি এম্বাসেডর বলবো এটার জন্য আমাদের জানতে হবে রাষ্ট্র দুটি কমনওয়েলথ ভুক্ত সদস্য দেশ কিনা। যদি কমনওয়েলথ ভুক্ত সদস্য হয় তখন যে দেশ প্রতিনিধি প্রেরণ করুক না কেন তাকে বলবো হাইকমিশনার। আর তিনি যে দপ্তর বা কূটনৈতিক অফিসে কাজ করবেন তাকে বলা হবে হাইকমিশন। বর্তমানে কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ হলো ৫৪ টি, এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান) দেশ কমনওয়েলথ এর সদস্য। যদি এসব দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক হয় এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করতে বা সম্পর্ক বজায় রাখতে কাউকে পাঠানো হবে তখন তিনি হবেন হাইকমিশনার। বাংলাদেশ একটি কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ এবং কানাডাও একটি কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ। কানাডা ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলো এবং কানাডা থেকে বাংলাদেশে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার্থে কাউকে পাঠানো হলো। এক্ষেত্রে যাকে পাঠানো হয়েছে তাকে বলা হবে হাইকমিশনার। কিন্তু যদি মিয়ানমার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয় এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রতিনিধি পাঠানো হয় তখন তাকে এম্বাসেডর বা রাষ্ট্রদূত বলা হবে।
এখন যদি একটি দেশ কমনওয়েলথ ভুক্ত হয় এবং অন্যটি কমনওয়েলথ ভুক্ত না হয় তখন কী বলা হবে?
ধরা যাক, বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলো। এখানে, বাংলাদেশ একটি কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ কিন্তু আমেরিকা কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ নয়। আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে প্রতিনিধি হিসেবে কাউকে পাঠানো হলো, এক্ষেত্রে তাকেও বলা হবে রাষ্ট্রদূত বা এম্বাসেডর। অর্থাৎ, যদি হাইকমিশনার বলতে হয় তবে উভয় দেশকেই কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ হতে হবে। তাছাড়া অন্যসব দেশের ক্ষেত্রে বলা হবে এম্বাসেডর আর দপ্তর কে বলা হবে অ্যাম্বেসি। কানাডা থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে কানাডিয়ান হাইকমিশনার এবং আমেরিকা থেকে হলে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত বা এম্বাসেডর।
✍️ মোঃ আসাদুল আমীন
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ধন্যবাদ
উত্তরমুছুন😍😍
মুছুন