বাংলাদেশ পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর (এস আই) নিয়োগের প্রস্তুতি

বাংলাদেশ পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর (এস আই) নিয়োগের প্রস্তুতি।

কিভাব নিবেন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি?

এই ধাপে মোট ২৫০ নম্বরের লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। মূলত এই লিখিত পরীক্ষায় চাকরি পাওয়ার মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তাই এই অংশে ভালো করার বিকল্প নেই। 

লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার একটা উপায় হলো আগের প্রশ্নগুলো দেখে প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে একটা ধারণা নেওয়া। লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত খুব বেশি গভীর থেকে প্রশ্ন করে না তাই  একটু গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারলে এই ধাপটি খুব সহজেই অতিক্রম করা যায়। 

এই পর্যায়ে সাধারণত প্রত্যেক বিষয়ের বেসিক থেকে প্রশ্ন করা হয়। কর্তৃপক্ষ লিখিত পরীক্ষার জন্য শুধু বিষয়ের নাম ও সিলেবাস দিয়েছে, কিন্তু নির্দিষ্ট বিষয়ের অভ্যন্তরীণ কোন টপিক থেকে প্রশ্ন আসবে তা দেয় নি। যেহেতু টপিক ফিক্সড না সেহেতু মূল পরীক্ষায় প্রশ্নের প্যাটার্ন ও টপিকের পরিবর্তন হতে পারে, নাও হতে পারে। তবে সমন্বিত একটি ভালো প্রস্তুতি নিতে পারলে যেকোনো প্যাটার্নের প্রশ্নেই ভালো পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব। তাই আজকে বিগত কয়েক বছরের পরীক্ষা প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে সাধারণ কিছু আলোচনা করা হয়ছে।

সাব-ইন্সপেক্টর লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবন্টন নিম্নরূপ-

বাংলা-৫০ মার্ক

ইংরেজি- ৫০ মার্ক

গণিত-৫০ মার্ক

সাধারণ জ্ঞান-৫০ মার্ক

মনস্তত্ত্ব-৫০

এখানে বলে রাখা ভালো পরীক্ষা ২ দিন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম দিন বাংলা ও ইংরেজি ১০০ মার্কের প্রশ্ন থাকে আর সময় থাকে ৩ ঘন্টা।

দ্বিতীয় দিন প্রথমে গণিত ও সাধারণ জ্ঞান এক প্রশ্নে ১০০ মার্ক, সময় থাকে ৩ ঘন্টা।

তারপর ব্রেক দিবো কিছুক্ষণ।এরপরে মনস্তত্ত্ব ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে সময় দিবে ১ ঘন্টা।

চলুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন।

বাংলা

বিগত সিলেবাস বিশ্লেষণ করে যে টপিকগুলো  পড়া উচিত।

১.রচনা-২ টি থাকবে ১ টি লিখতে হবে (১০/১৫ মার্ক)

মূলত চার টাইপের রচনা পড়া উচিত

i.বাঙ্গালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংক্রান্ত 

ii.সামাজিক সমস্যা ও জাতীয় ইস্যু সংক্রান্ত 

iii.তথ্য-প্রযুক্তি সংক্রান্ত 

iv.সাম্প্রতিক ঘটনা ও উন্নয়ন সম্পর্কিত

২. ভাবসম্প্রসারণ- ১০ মার্ক

৩.অনুবাদ ( ইংরেজি থেকে বাংলা)- ১০/১৫ মার্ক

৪.অর্থসহ বাগধারা******

৫.এক কথায় প্রকাশ******

৬.সন্ধি বিচ্ছেদ**

৭.প্রতিশব্দ **

৮.কারক,সমাস, বিপরীত শব্দ*

৯.সাহিত্য-সাধারণত সাহিত্য থেকে কম প্রশ্ন আসে। তবে সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ ২০২১ পরীক্ষায় ১০ নম্বরের সাহিত্যের প্রশ্ন এসেছে।

আমার পরামর্শ থাকবে যেহেতু ব্যাকরণে নাম্বার কাটার কোন সুযোগ নাই তাই এগুলো যেন এক্টাও ভুল না হয় সেই টার্গেট রাখা।

কি বই পড়া উচিত?

- নবম- দশম শ্রেণির ব্যকরণ বই

- অগ্রদূত বাংলা

-অ্যাসিওরেন্স নিয়োগ সহায়িকা

**সবগুলো টপিক ভিত্তিক পড়লেই হবে ইনশাআল্লাহ 

ইংরেজি

পূর্বে অনুষ্ঠিত হওয়া লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে নিম্নের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো সাজানো হয়েছে:

Essay: সাধারণত দুটি Essay থাকে, যেকোনো একটি Essay এর উত্তর করতে হয় (১০-১৫ মার্ক)

i. Development of Bangladesh related topic

ii. Current Problem and situation related 

iii.Liberation war and Culture related 

iv. Ict related পড়লেই হয়

Passage: ১০ নম্বরের একটি Passage থাকে, যার মধ্যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়।

Grammar: সবসময়ই Grammar থেকে ১০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে Fill in the gap এবং Make sentences with Idioms থেকে প্রশ্ন আসে।

Letter: ১০ নম্বরের একটি Lettter প্রায়ই আসে।

Translation: প্রতিবারই ১০/১৫ নম্বরের বাংলা থেকে ইংরেজি Translation আসে।

আমার পরামর্শ থাকবে Idiom and Phrase, Appropriate preposition, Preposition, Translation ,  Article, Tense খুব ভালো করে পড়া যাতে এইখানে কোন নাম্বার কাটা না যায়।

আর প্রতিদিন কম করে হলে ও ৫-৭ টা করে ভোকাবুলারি পড়া ও পেপার পত্রিকার হেডলাইন পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।

চরম সত্য এটাই যে যত ভোকাবুলারির ব্যবহার পারবে তার ইংলিশে স্কিল তত বাড়বে।তাই প্রতিদিন ইংরেজি পত্রিকা পড়ার কোন বিকল্প নাই।

সহায়ক বই

- Master English grammar( Topic wise)

-Daily Newspaper ( For practice)

--অ্যাসিওরেন্স নিয়োগ সহায়িকা

সাধারণ জ্ঞান

বিগত  পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে  মোট ৪-৫ধরনের প্রশ্নের প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায়। যা নিম্নে আলোচনা করা হল – 

১.বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিকপ্রসঙ্গে ২ টি) - ১০*২ নম্বর

২.সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ( দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান)- ৫ নম্বরের মতো।

৩.সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর( সংক্ষেপে লিখুন ২ টি) - ১০ নাম্বার

৪.টীকা লিখুন (৪-৫ টি থাকে) - ১০ নাম্বার

৫.পূর্ণরূপ লিখুন (৫-১০ টি থাকে) - বিভিন্ন টার্মের পূর্ণরূপ আসতে দেখা যায়।যেমন: NATO, BIMSTEC ইত্যাদি - ৫ নাম্বার

কিভাবে ভালো করবেন?

*রচনামূলক প্রশ্নের জন্য চলমান বিভিন্ন বৈশিক সংকট,পরিবেশগত ইস্যু,সামাজিক সমস্যা,পুলিশিং কর্মকান্ড,মুক্তিযুদ্ধ,জাতীয় উন্নয়ন আর সমসাময়িক কোন ইস্যু থাকলে এগুলো খুব ভালো করে পড়া।

*সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের জন্য দৈনন্দিন বিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন বেশি আসে তাই সাধারণ বিজ্ঞানের জন্য একদম বেসিক বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা রাখা। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন অর্থনৈতিক চুক্তি, জাতীয় উন্নয়ন, মেগা প্রকল্প ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি দেখে যাবেন।

* টীকা অংশের জন্য সমসাময়িক বিষয়,বিজ্ঞান এ তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়,মুক্তিযুদ্ধ,পুলিশ সংক্রান্ত বিষয়,আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স সামাজিক সমস্যা, বৈশিক সংকট,  সর্বোপরি রচনামূলক অংশটা ভালো করে পড়লেই এখানে কভার হয়।

*পূর্ণরূপের জন্য বিভিন্ন সংস্থা সহ যত কিছু আছে সব খুব ভালো করে পড়া যেন এই অংশে কোন নাম্বার মিস না হয়।

সহায়ক বই

সাধারণ জ্ঞানের জন্য সেভাবে বই সাজেস্ট করা খুব কঠিন।

আমার পরামর্শ থাকবে প্রতিদিন পত্রিকা পড়ে যেইটা হট টপিক মনে হবে সেইটা সম্পর্কে ভালো ধারণা নেওয়া আর সম্পাদকীয় পাঠ প্রতিদিন পড়া।এতে করে রাইটিং স্কিল ভালো হয়

মন চাইলে বেসিক জানার জন্য mp3 সাধারণ জ্ঞান,  ৯ম-১০ম শ্রেণির ইতিহাস ও বাংলাদেশ বিশ্বপরিচয় বই পড়তে পারেন।

গণিত

বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় গণিতে মূলত পাটিগণিত আর বীজগণিত থেকেই প্রশ্ন আসে।তবে মাঝেমধ্যে বেসিক জ্যামিতি থেকেও প্রশ্ন আসতে দেখা গেছে।

১.পাটিগণিত-৩০ নাম্বার

নরমালি প্রতিটা প্রশ্নে ১০ নাম্বার করে থাকে তাই এই অংশে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

গণিতে আসলে ধারণা দেওয়ার মতো কিছু নাই তাই গুরুত্বপূর্ণ অংক যা না করলেই না তা একটু ধারণা দিলাম।

*লাভ-ক্ষতি,শতকরা,নল ও চৌবাচ্চা,সুদকষা, পরিমিতির অংকগুলো,ট্রেন ও প্ল্যাটফর্ম।

এছাড়াও সব অংকই করতে হবে যেমন: একক-দশক স্থানীয় অংক, ঐকিক নিয়ম,অনুপাত-সমানুপাত,গড়,পিতা-পুত্রের অংক,,ল.সা.গু, গ.সা.গু সব পড়তে হবে।

২.বীজগণিত-২০ মার্ক

উৎপাদকে বিশ্লেষণ, মান নির্ণয় খুব ভালোভাবে পড়তে হবে।

এছাড়াও সূচক ও লগারিদম, সরল সমীকরণ ইত্যাদি।

জ্যামিতির জন্য বেসিক ধারাণা আর গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য পড়তে হবে।

সহায়তা বই

৮ম আর ৯ম-১০ম শ্রেণির সাধারণ গণিত বই,পুরাতন গণিত বই,খাইরুলস বেসিক ম্যাথ।

*** সব সময় টার্গেট রাখতে হবে গণিতে ৫০/৫০ আর মানসিক দক্ষতায় মিনিমাম ৪০-৪৫ তোলার তাহলে চাকরি পাওয়া অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়।যেহেতু এই দুই পার্টে নাম্বার কাটার কোন উপায় নাই তাই প্রস্তুতি ১০০% নিতে হবে যাতে করে ফুল মার্ক কভার করা যায়।

মনস্তত্ত্ব

মনস্তত্ত্বের টপিক বিসিএস পরীক্ষার প্রিলি ও লিখিত মানসিক দক্ষতার টপিকের সাথে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই এ অংশে নতুন করে বলার কিছু নেই।

বেশিরভাগ প্রশ্ন ২ নম্বর করে থাকে, কয়েকটা ১/৩ নম্বরের হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে ২২ -২৫টি প্রশ্ন আসে যার মোট নাম্বার ৫০।

প্রশ্নগুলো এমসিকিউ এবং লিখিত উভয়  আকারেই  থাকতে পারে। অর্থাৎ কিছু প্রশ্নের উত্তর বৃত্ত ভরাট করতে হয়, আবার কিছু প্রশ্নের উত্তর সরবরাহকৃত উত্তরপত্র লিখতে হয়।

এ অংশে সাধারণত ভাষা ও সাহিত্য, সাদৃশ্য বিচার, সাংকেতিক বিন্যাস বা পুনর্বিন্যাস, সম্পর্ক ও বিশেষত্ব নির্ণয়, অসম্ভাব্যতা বিচার, বর্ণবিন্যাস ও শব্দ গঠন, গাণিতিক যুক্তি, জ্যামিতির মৌলিক বিষয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ,ধারা পরিমাপ,চিত্রের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য এবং সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন করা হয়। 

সহায়ক বই

আমি Khairul's Mental Ability আর ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে অনেক প্রশ্ন ঘুরতো সেগুলো সলভ করতাম।চাইলে আপনারা ইন্টারনেট এ অনেক প্রশ্ন পাওয়া যায় সেগুলো ও পড়ে দেখতে পারেন।

সব বিষয়ের জন্য মোটামুটি ভালো প্রস্তুতির জন্য অবশ্যই অ্যাসিওরেন্স নিয়োগ গাইড পড়তে পারেন।এখানে মোটামুটি প্রিভিয়াস প্রশ্ন সহ ভালো সাজেশন থাকে।

লেখা শেয়ার করে টাইমলাইনে রেখে দিতে পারেন।

কারো কোন প্রশ্ন থাকলে বিনা সংকোচে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আর পরবর্তী আপডেট পেতে আইডি ফলো দিয়ে সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

মো: ফারেশ হোসেন

সুপারিশপ্রাপ্ত

৪২ তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র)