ব্রেকিং নিউজ
বিসিএস পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা সর্বশেষ সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫ ব্যাংক চাকরির প্রস্তুতির টিপস ও কৌশল ভাইভা পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫: সর্বশেষ আপডেট প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স চাকরির পরীক্ষার জন্য ইংরেজি গ্রামার বিসিএস পরীক্ষার জন্য গণিতের শর্টকাট চাকরির ইন্টারভিউর জন্য টিপস সাধারণ জ্ঞান কুইজ ২০২৫ বিসিএস পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা সর্বশেষ সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫ ব্যাংক চাকরির প্রস্তুতির টিপস ও কৌশল ভাইভা পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫: সর্বশেষ আপডেট প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স চাকরির পরীক্ষার জন্য ইংরেজি গ্রামার বিসিএস পরীক্ষার জন্য গণিতের শর্টকাট চাকরির ইন্টারভিউর জন্য টিপস সাধারণ জ্ঞান কুইজ ২০২৫ বিসিএস পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা সর্বশেষ সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫ ব্যাংক চাকরির প্রস্তুতির টিপস ও কৌশল ভাইভা পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫: সর্বশেষ আপডেট প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স চাকরির পরীক্ষার জন্য ইংরেজি গ্রামার বিসিএস পরীক্ষার জন্য গণিতের শর্টকাট চাকরির ইন্টারভিউর জন্য টিপস সাধারণ জ্ঞান কুইজ ২০২৫

বিসিএস ভাইভার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন



আমি ৪১ তম বিসিএসে আমার সর্বশেষ চয়েজ পেয়েছিলাম। ৪৩ তম বিসিএসে আমার সর্বপ্রথম চয়েজ পাই। আমার কাছে গোচরে-অগোচরে প্রচুর মানুষের জিজ্ঞাসা, আমার দ্বিতীয় বিসিএস থেকে প্রথম বিসিএসে কি ঘাটতি ছিল যার জন্য পরেরটায় এক লাফে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে যাই? আজ থেকে ঠিক ৭ মাস ১৫ দিন আগে যখন ৪৩ এর লিখিত ফলাফল পাই তখন আমিও ডাবল ক্যাডার পাওয়া ভাইয়া-আপুদের দ্বারে দ্বারে ভিখ মাঙতাম যে "শামসুন্নাহার স্মৃতি" থেকে রাতারাতি "পরীমণি" হয়ে যাওয়ার টোটকাটা কি ছিল? বেশিরভাগই ক্যাডার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভাইভাকে এগিয়ে রেখেছে। 


সম্ভবত এটাই বিশেষ নিয়ে আমার প্রথম পোস্ট, এবং শেষ পোস্ট অবশ্যই। আমি ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সাথে ছিলাম, আছি - তবে কখনোই বিসিএসকেন্দ্রিক লেখা লিখে আমার স্বকীয় স্টাইল থেকে সরে আসতে চাই নাই। হ্যাঁ জানি বিসিএস নিয়ে পাবলিক পোস্ট দিলে রাতারাতি অনেক ফলোয়ার জুটে যেতো হয়তো এবং শেয়ারও হতো কিন্তু আমি কখনোই অন্যের মনোরঞ্জনের জন্য লিখি নাই। তবে আজ আয়নায় যখন আমার মাঝে অনেকের প্রতিবিম্ব দেখি তখন মনে হয় সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পাল্লার বাটখারা মেপে কয়েকটা কথা লিখি - যদি কেউ চুল পরিমাণও উপকৃত হয়!


গৎবাঁধা পরামর্শের বাইরে আমি যেসব স্ট্র্যাটেজি ৪৩-তম বিসিএসে কাজে লাগিয়েছি সেটা আপনাদের নিজের ভাষায় বলি। যদিও আমি এখনো অনেক কম জানি, কম বুঝি, আমার এতো অওকাদও নেই স্বল্প জ্ঞানে তস্য গল্প করার তবুও পরামর্শ দেয়ার উদ্দেশ্যে নয় বরং নিজের জুতা পায়ে অন্যকে হাটানোর জন্যই এই লেখা।


1️⃣ ভাইভার আগে ক্যাডারভিত্তিক পড়া বাদ দিয়ে বোর্ডভিত্তিক পড়ালেখা আমাকে ৪৩-তমতে বেশি কাজে দিয়েছে।পিএসসির যে কয়জন বোর্ড মেম্বার আছেন তাঁদের নিয়েই আমি ভাইভার আগে বসে বসে চিন্তা করতাম। তাঁরা কে কিরকম মার্কিং করেন সেটা না, বরং তাঁরা কে কি দেখে মার্ক করেন সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং ভাইয়া-আপুদের পোস্ট পড়ে। 


যেমন আপনারা ইতিমধ্যে জানেন কোনো কোনো বোর্ডের চেয়ারম্যান ইমপ্রেসড হোন বাংলা সাহিত্যে আপনার জ্ঞান দেখে, আবার কোনো কোনো বোর্ডের চেয়ারম্যান আপনি বর্তমানে কি জব করেন সেটার ধরন দিয়ে আপনাকে বিচার করবে। কেউ কেউ আছেন যাঁরা সরাসরি প্রার্থীর সঠিক জবাব চান, আর কেউ কেউ আছেন যারা প্রার্থী কি উত্তর দিচ্ছে তার চেয়ে বেশি কিভাবে উত্তর দিচ্ছে সেই স্মার্টনেস, উচ্চারণের অ্যাকসেন্ট দেখেন। 


মনে রাখবেন বোর্ড সবচেয়ে বড় নির্ণায়ক আপনার ক্যাডার প্রাপ্তির। আপনার কার বোর্ডে ভাইভা হবে আপনি তা জানেন না। তাই মনে মনে ১৫ জনের জন্য ১৫ রকম প্রস্তুতি রাখুন। কিভাবে? ধরুন ভাইভার লাইনে যেই মুহূর্তে দেখবেন আপনার পাওয়া কাগজে লেখা সদস্যের নাম A, সাথে সাথে মনে করে নিবেন তিনি কিরকম ক্যান্ডিডেট পছন্দ করেন। যেমন ধরুন, Mr A বা Mrs A কমবেশি সব প্রার্থীকেই তার স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে এক্সট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটি কি ছিল সেটা দেখে টুকটাক বিচার করেন। অথবা তিনি বিশেষ কোনো ডিগ্রি/সার্টিফিকেট প্রেফার করতে পারেন যেটা হয়তো আপনার আছে। নাম পাওয়ার সাথে সাথে সেই জিনিসগুলো রিওয়াইন্ড করে নিবেন যেন কোনো এক প্রসঙ্গে বিষয়গুলোর উল্লেখ করা যায়। 


যেমন ৪৩ তম-তে যখন আমি আমার বিজ্ঞ বোর্ড চেয়ারম্যানের নাম দেখি জনাব ফয়েজ আহমেদ তখনই মুহূর্তের মধ্যে আমার মাথায় ক্লিক করে যে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আগে কাজ করেছেন এবং তাঁর স্ত্রীও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালনায় আছেন - যেটা কিনা আমার বর্তমান ক্যাডার "পরিবার পরিকল্পনা" এর মাদার কনসার্ন। কাজেই আমার ইনস্ট্যান্ট টার্গেট সেট হয় যেভাবেই হোক, পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে যে আমি গর্বিত দেশের এত প্রগতিশীল সম্ভাবনাময় খাতে কাজ করতে পারবো বলে এবং এখান থেকে এসডিজির ঘাত সহনশীলতা কেমন হবে এই বিষয়গুলো আমি সুযোগ পেলে তুলে আনবোই! এছাড়া তিনি যেহেতু সরাসরি জনপ্রশাসনে ছিলেন, তাই মোটামুটি ধরেই নিয়েছিলাম সরকারের সাফল্য নিয়ে কিছু অবশ্যই জানতে চাইবেন। তাই পাশের জনকে শুনিয়ে জিজ্ঞেস করে নিলাম শেখ হাসিনার দশটি উদ্যোগ ঠিক ঠিক বলছি কিনা। এবং বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, আমাকে ঠিকই এই নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়! সরাসরি এটা জিজ্ঞেস না করে আইটি সেক্টরে সরকারের সাফল্য (আমার গ্র্যাজুয়েশনের বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত) জানতে চাওয়া হয়। 

বিসিএস ভাইভা ক্যাম্পেইনার গ্রুপে প্রতিনিয়ত ভাইভা অভিজ্ঞতা অনেকে শেয়ার করেন। আপনারা চোখ রাখবেন কোন বোর্ডে কোন ধরনের প্রশ্ন ঘুরেফিরে বারেবারে আসে। নিজেই বুঝে যাবেন অনেক কিছু। পিএসসির ওয়েবসাইটে গেলে বিজ্ঞ সদস্যবৃন্দের জীবন বৃত্তান্ত পাবেন। সেখান থেকে জেনে নিবেন তাঁরা কে কোথায় আছেন। 


বেশিরভাগেরই প্রথম পছন্দ থাকে পররাষ্ট্র নয় প্রশাসন। আমার বিগত দুই বিসিএসের সেল্ফ রিসার্চের ফলাফল বলে, শুধু জেনারেল ক্যাডারে আপনি যদি প্রথম পছন্দ প্রশাসন রাখেন তবে আপনার বোর্ড হতে পারে জনাব ও.এন.সিদ্দিকা খানম স্যার, জনাব উত্তম কুমার সাহা স্যার, জনাব ফয়েজ আহমেদ স্যার, জনাব হামিদুল হক স্যার প্রমুখ। এবং শুধু জেনারেল ক্যাডারে পররাষ্ট্র ক্যাডার যারা প্রথম চয়েজ দেন তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনাব শামীম আহসান স্যার এবং জনাব দেলোয়ার হোসেন স্যারের বোর্ডে যাবেনই যাবেন। এরপরে জনাব গোলাম ফারুক স্যার, জনাব মুবিনা খন্দকার স্যার, জনাব জাহিদুর রশিদ স্যারের সম্ভাবনা আছে। বাকিদেরটা আমি ঠিক জানি না। তবে অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী যদি আমার সাথে কারোটা না মিলে। দেখুন পুরোটাই সম্পূর্ণ আমার নিজের মাত্র দুটা বিসিএসে দেখা জেনারেল ভাইভার ঘটনাবলির একটা খসড়া। আপনারা অল্প সময়ে যাতে ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে এগোতে পারেন তার জন্য বললাম।


2️⃣ আপনি যদি আগে একবার অন্তত রিকমেন্ডেড থাকেন তাহলে একদম নির্ভার থাকবেন। যত অসন্তোষই থাকুক না কেন মনের ভেতরে বা আপনার পজিশন যত শেষ দিকেই থাকুক না কেন, সবকিছু পজিটিভ বলবেন। পায়ের নিচে মাটি শক্ত থাকলে শত্রুও আঘাতের আগে দুইবার ভাববে। ভুলেও কখনো বর্তমান সুপারিশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা কাম্য না। আমার কাছেও আমার সিনিয়রদের পরামর্শ ছিল যে, আমি যেই ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছি সেটা নিয়ে যে আমি হীনমন্যতায় নাই এটা আত্মবিশ্বাসের সাথে তুলে ধরা এবং এতজনের মাঝেও যে আমি জায়গা করে নিতে পেরেছি সেটা নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। পাশাপাশি এটা তুলে ধরা যে, স্রষ্টা মানুষকে সুযোগ দেনই শোধরানোর জন্য। তাই অবহেলা না করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। 


আমাকে ঘুরেফিরে বারবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে আমি খুশি কিনা, কেন বদলাতে চাই, নেগেটিভ দিক কি কি! নেগেটিভ দিক জানতে চাইলে বুঝিয়ে বলবেন যে কোনো কিচ্ছু নেগেটিভ নাই, শুধু আপনি আপনার ১ম টা চান তাই আবার আসছেন। মনে রাখা উচিত যে, ২৬টা ভিন্ন ক্যাডারের সৃষ্টি হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্রের ২৬টা ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণে। তাই কোনো ক্যাডার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলে বোর্ড মেম্বাররা আপনার ইনফ্রেরিওরিটি ডিটেক্ট করতে পারেন। 


আরেকটা জিনিস। পিএসসির বোর্ড মেম্বাররা কিন্তু নিজেরা খুব ভালোমতই জানেন যে তাঁদের দেওয়া মার্কসের তারতম্যের কারণেই ফলাফলে অনেক পরিবর্তন হয়। কাজেই বুদ্ধিমানের কাজ হলো আগের বিসিএস থেকে এই বিসিএসের রিটেন যতই মার্কামারা হোক না কেন, কনফিডেন্টলি বোঝাবেন যে আপনি লিখিত দিতে দিতে এখন অনেক শাণিত। আগেরটার থেকে এবার রিটেন অনেক ভালো হয়েছে, মানে এমন ভাব থাকবে যে কোনোমতে পাশ মার্ক পেলেই আপনার হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাস করেন এটা আমিসহ পরিচিত অনেকের বেলায় কাজে দিয়েছে!


3️⃣ এবার আসি পড়াশোনায়। যদিও ধারাবাহিক ক্রম চিন্তা করলে চেয়ারম্যানের পরই এক্সটার্নাল-১ দেশ ও বহির্বিশ্ব নিয়ে প্রশ্ন করে এবং তারপরের সিরিয়ালে এক্সটার্নাল-২ সাবজেক্ট নিয়ে প্রশ্ন করে তবুও আমি ব্যক্তিগতভাবে অর্ডারটা পাল্টে আগে এক্সটার্নাল-২ কি কি প্রশ্ন করতে পারে সেদিকে মন দেই। যদিও আমার বোথ ক্যাডার না, শুধু জেনারেল ছিল তবুও আমার পার্সোনাল অ্যানালাইসিস হলো বোর্ড মেম্বাররা আপনার প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানটা দেখেই আপনার সিরিয়াসনেস এবং ডিটারমিনেশন অনেকখানি ধরে ফেলেন। তাই সবার আগে আমি কভার করতাম নিজের সাবজেক্টের সাথে আমার প্রথম পছন্দের সাদৃশ্য এবং উন্নয়নের জায়গাগুলো কি কি। আমি কিভাবে এখানে থেকে দেশকে বদলায় দিতে পারি টাইপ মুখরোচক উত্তর। অন্য কোনো প্রশ্ন পারি আর না পারি আমার মনে হয় প্রত্যেকের উচিত এমন প্রস্তুতি নেওয়া যাতে নিজ বিষয় থেকে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় চোখেমুখে কনফিডেন্স চকচক করে। সিজিপিএ যাই হোক, দিনশেষে একজন প্রার্থী যে তার পঠিত বিষয়কে অন্তরে ধারণ করে দেশসেবায় নেমেছে এটা যাতে অন্তত প্রশ্নকর্তার বিশ্বাস হয়। অন্য প্রশ্নের উত্তর না পারলে নাই, এখানে ধরা খেলে পিছলে যেতে পারি। সেই সাথে সাবজেক্ট নিয়ে ওপেন এন্ডেড উত্তরে চেষ্টা করা উচিত একটু ইউনিক কিছু বলা। আমি আমার ক্ষেত্রে এই ইউনিকনেস ধার করেছিলাম ইন্টার্নশিপের সময়ের কিছু অভিজ্ঞতা দিয়ে। 


সাবজেক্টওয়াইজ পড়ার পরের অর্ডারে ধরেছিলাম পত্রিকা। আমি পিসিতে ১০০টা ট্যাব ওপেন করে ই-পেপার দেখতাম, কাগজে আমি কমফোর্টেবল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেষ ছ'মাসে কোথায় কোথায় সফর করেছেন, দেশে সম্প্রতি নতুন কি কি অ্যাক্ট হলো, কোনো স্থাপনার উদ্বোধন হলো কিনা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো পরিবর্তন আসলো কিনা এসবের পাশাপাশি কোন কোন দেশে মিলিটারি ক্যু চলে, এই বছর কি কি গ্লোবাল সম্মেলন আছে বা এখন চলে এসব নিয়ে জানার ম্যাগনিচুডটা আপনার ডিসি-এসপির কাজ কি কি সেটা নিয়ে জানার চেয়ে ঢের দরকারি। এসব নিয়ে যত পারেন তত ডিটেইলসে জানবেন। এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর হলে অবশ্যই একই শিরোনামে লেখা নিউজ একাধিক সোর্স থেকে ঘাটবেন। দেখবেন যে একই নিউজ নয়টা পত্রিকা সেইম টু সেইম লিখলেও যে কোনো একটা হয়তো অ্যাডিশনাল কোনো ইনফো ক্যারি করছে। যেমন আমার মনে আছে শেষ বিসিএসের ভাইভার সময় G-20 সম্মেলন চলছিল এবং মার-মার কাটকাট টপিক ছিল ভাইভার। বেশিরভাগ পত্রিকাতেই লেখা এসেছে যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেখানে ৪টি দফা পেশ করেন। তবে প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেখানে মোট ৩টি অধিবেশনে অংশ নেন এবং ৩টি অধিবেশনের মূলটিতে ৪টি দফা উল্লেখ করেন, যেটাই সবার জানা ছিল। কিন্তু আরো ২টি অধিবেশনে প্রায় ৭-৮টা দফা ছিল, যেটা অনেক পত্রিকাতে বা নোটে আমি দেখি নি। কিন্তু একটা অনলাইন পোর্টালে পেয়েছিলাম এবং পুরো বিস্তারিত বলে আসি বোর্ডে।


4️⃣ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ৩টা বইয়ের ১টাও যদি কোনোদিন আগে না পড়ে থাকেন কোনো সমস্যা নাই। ফাঁকিবাজি বুদ্ধি আছে। বইগুলো থেকে প্রশ্ন আসে সাধারণত ৩ ধরনের - একটা হলো কোন বইটা কত সাল থেকে কত সাল পর্যন্ত কাহিনী নিয়ে লেখা, দ্বিতীয়ত জানতে চাওয়া হয় বইয়ের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার কিভাবে হয় এবং তৃতীয়ত যে টাইপ সেটা সবচেয়ে বেশি আস্কড। প্রথম ২টা শুরুতে ভূমিকা পড়লেই জেনে যাবেন। তৃতীয় টাইপ হলো কোনো একটা বইয়ের নাম মেনশন করে বলা ঐ বই থেকে একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলা বা আপনার হৃদয়ে দাগ কেটেছে এমন কিছু কি আছে কিনা। এটার জন্য আমি চোরাই রাস্তায় এক কাজ করতাম। ধরেন অসমাপ্ত আত্মজীবনী হাতে নিলাম। এরপরে আল্লাহর নামে পৃষ্ঠা শাফল করে যেকোনো এক পাতায় দৈবভাবে ল্যান্ড করলাম। এরপর ঐখান থেকে যেকোনো একটা স্তবক সুন্দরভাবে মুখস্থ করে নেই। প্রেক্ষাপট বুঝতে আগে-পিছের দুই এক লাইন বুঝে নেই। পৃষ্ঠা নম্বরও টুকে রাখি টিচারদের ইমপ্রেস করতে, যাতে উনাদের টেবিলে বাই চান্স বইটা থাকলে উনারা তৎক্ষণাৎ মিলায়ে দেখলে আমার অথেনটিসিটিতে ইমপ্রেসড হয়। ব্যস হয়ে গেলো। বঙ্গবন্ধুর বইয়ের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো তাঁর বইয়ের যে কোনো লাইনই একেকটা উক্তির মত। আপনারা একটু এটা ট্রাই মারেন মজা পাবেন। যেমন আমি এই যে এখন এই পোস্ট লিখতে লিখতেও অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পাতা উল্টায়ে ৩৬ নম্বর পেইজে আসলাম। এক নজরে দেখে মনে হলো ২ নম্বর প্যারাটাকে এক কথায় পাক-ভারত বিভাজন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়। আমাকে যদি এখন ভাইভা বোর্ডে জিজ্ঞেস করতো এই বইয়ের কোন দিকটা আমার স্মৃতিতে বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে তখন আমি একটু মশলা মিশিয়ে হয়তো এভাবে বলতাম যে, "পুরো বইটার প্রতি পাতায় পাতায়ই এত সহজ ভাষায় এত কঠিন কঠিন দিনের বর্ণণা দেয়া যেটা মসৃণভাবে পাঠককে ধরে রাখতে পারে। বইটি বেশ আগে পঠিত, সব ঘটনা স্পষ্টভাবে মনে নেই। তবে আবছাভাবে মনে আছে, প্রায় ৩৫০ পাতার এই জীবনীর প্রথম ১০ ভাগের ১ ভাগেই বঙ্গবন্ধু মানসের অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটা ঝলক দেখা যায় যেটা আজকে প্রায় ১০০ বছর ধরে আমার দেশ অনুসরণ করছে। ধর্মের ভিত্তিতে যে পৃথক দেশ প্রয়োজন এবং অখণ্ড ভারতে যে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকবে না এই উপলব্ধিও অনূর্ধ্ব পঁচিশেই বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। খুব সম্ভবত ৩৫ বা ৩৬ নম্বর পৃষ্ঠায় যখন দেখলাম তিনি লিখলেন "পাকিস্তান না হলে দশ কোটি মুসলমানের কি হবে?" ঠিক ঐ মুহূর্তে আমার মনে ক্লিক করে পঁচিশ বছর বয়সে আমি কি চিন্তা করতাম! অথবা এখনকার ছাত্রনেতারাও কি এতো গভীরভাবে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে কখনো ভাবে?' । যাই হোক, আমি কথাপ্রসঙ্গে কেবল একটি উদাহরণ দিলাম। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।


5️⃣ যেদিন ভাইভা দিতে যাবেন ঐদিনের পত্রিকা থেকে ন্যুনতম ৩টা করে জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং অর্থ ও বাণিজ্য সংবাদ দেখে যাবেন। বিগত অনেক বিসিএসে এটা জিজ্ঞেস করা হয়েছে। ভাইভার দিনের বাংলা-হিজরী সন এবং তারিখ দেখে নিবেন। ঐ মাসের বিশেষ দিনগুলো হিসেব রাখবেন। পিএসসির যেই জায়গার সামনে আমরা সবাই ভাইভার দিন ছবি তুলি, সেই জায়গায় দেখবেন লেখা "তারিখঃ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩" লেখা।  কাকতালীয়ভাবে ১৮ সেপ্টেম্বরই আমার ভাইভা ছিল এবং আমার বোর্ডের একজনকে পরে জিজ্ঞেস করা হয় যে "পিএসসির এই নতুন ভবন কবে নির্মিত হয়"। তিনি অবশ্য পেরেছিলেন উত্তরটা। আমাকে জিজ্ঞেস করলে নগদে ধরা খেতাম। 


এবারে আসি আত্মপক্ষ খণ্ডনে। ৪১তম বিসিএসে আমার করা ভুলগুলো কি কি ছিল আমি ধারাবাহিকভাবে একে একে লিখছি যাতে আপনারা সতর্ক থাকতে পারেন -


1. যখন আমি ৪১ তম বিসিএসে আবেদন করি তখন অ্যাপিয়ার্ড ছিলাম, তাই চয়েজলিস্ট সাজাতে অনেক গণ্ডগোল করি। অনেক বোর্ড হয়তো সেটা ওভারলুক করে যায় তবে কিছু বোর্ড সেটার ভিত্তিতে আপনার সচেতনতাবোধ এবং দূরদর্শিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমার দ্বিতীয় পছন্দ পররাষ্ট্র শোনার পর জিজ্ঞেসও করা হয় নি কেন এটা দ্বিতীয়, তাহলে অন্তত বোঝাতে পারতাম এটা ইচ্ছাকৃত না। এরপর আমাকে টানা কয়েকটা স্পীচ দিতে বলা হয় এবং কঠিন থেকে কঠিনতর বিষয়ে যাওয়া হয় ধীরে ধীরে। যদিও আমার নিজের কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছিল আমি একদমই না ঘাবড়ে যথেষ্ট স্পনট্যানাসলি এবং ফ্লুয়েন্টলি স্পীচ ডেলিভার করেছি, তবুও বিজ্ঞ বোর্ডের সদস্যবৃন্দের কাছে হয়তো আমার উত্তর মনের মতো হয় নি। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, যারা আমার মত অজ্ঞতাবশত পররাষ্ট্র ২য় চয়েজে রেখেছেন তাদের এমন মনে করার কারণ নেই যে আপনাদের সব শেষ! শুনতে হাস্যকর লাগবে, ৪৩ তমতে পররাষ্ট্র আমার ৩য় পছন্দ ছিল!! কিন্তু সৌভাগ্যবশত সেবার ১ম পছন্দ জানতে চাওয়ার পর আর ২য়,৩য় পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করা হয় নি। চাইলে এবারও আবার আগেরবারের দেজা ভ্যু হতে পারতো, তাই না? এটাই ছিল আল্লাহ পাকের ইচ্ছা। 

সুতরাং যাদের চয়েজলিস্ট ওলটপালট আছে এরকম ক্ষেত্রে সুন্দর করে বোঝাবেন যে, আবেদনের সময় আপনি অনভিজ্ঞ ছিলেন তাই এটা আপনার জানার সীমাবদ্ধতার কারণে হয়েছে, অন্য কোনো যুক্তি অধিকাংশ বোর্ডে এখনও গ্রহণযোগ্য না।


2. কমন জিনিস ভুল করা ভাইভায় কবীরা গোস্তাকি। টানা কতগুলো স্পীচ দিতে দিতে শেষমেশ "Pluralism of Bangladesh" শীর্ষক চরম তিক্ত বিষয়ে স্পীচ দেওয়ার সময় আমি ভারতের পার্লামেন্টে গিয়ে ভুল করে প্রেসিডেন্টকে "হার এক্সিলেন্সি" না বলে "হিজ এক্সিলেন্সি" সম্বোধন করেছি। একে তো প্লুরালিজম কি জিনিস, এটা নিয়ে কি বলা যায় সেটা ভেবে ভেবেই কুল পাচ্ছিলাম না তার উপর আগের স্পীচের প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতিবৃন্দ সব পুরুষ হওয়ায় ভারতের প্রেসিডেন্ট যে মহিলা এটা বলার ফ্লোতে মাথাতেই ছিল না। এটাতে প্রশ্নকর্তা সাথে সাথে থামিয়ে দিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেন। পরের স্পীচে ফিডেল ক্যাস্ত্রোর উক্তি সুন্দর করে বলতে পারলেও ঐ মুহূর্তে "ফিডেল ক্যাস্ত্রো" নামটাও মাথায় আসতেও বেশ সময় নিয়েছে। এসব ছোটখাটো ভুলে মার্কস হয়তে কমেছে।


3. আমরা সাধারণত প্রথম কয়েকটা পছন্দ পর্যন্ত জেনে যাই। কিন্তু আপনার কপাল মন্দ হলে আপনাকে এর পরেও আরো পাঁচটা চয়েজ কি কি এটা জানতে চাওয়া হতে পারে। তবে আমার ধারণা এটা সাধারণত প্রথম বিসিএস যারা দেয় তাদেরই বেশি চেখে দেখা হয় হয়তো। আগে যারা নন ক্যাডার পেয়েছেন বা কোনো ক্যাডারে ইতিমধ্যে সুপারিশপ্রাপ্ত তাদের থেকে তেমন জানতে চাওয়া হয় না। তবুও আমি বলবো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা দিয়েছেন একটু দেখে যাবেন। আমার ৫ম পছন্দ ছিল অডিট। আমাকে অডিট ক্যাডার নিয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয় এবং আমি পারি নি। তবে প্রশ্নকর্তা অবশ্য নিজেই পরে বলেন যে "কোনো সমস্যা নেই, আপনার যেহেতু ১ম দিককার পছন্দ না তাই না জানলেও চলবে!"


4. আমার ফর্মে বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা সবই ঢাকায় দেওয়া ছিল। আমার ঢাকায় জন্ম, ঢাকাতেই স্থায়ীভাবে ছোট থেকে নিজের বাসায় বেড়ে ওঠা, নানা-নানু-দাদা-দাদু নাই তাই এখন দেশের বাড়িও উপলক্ষ ছাড়া যাই না। কাজেই ঢাকার লোক হিসেবে নিজ জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি, স্থান, নামকরণ সব ঢাকাভিত্তিকই শিখে যাই। কিন্তু বোর্ড মেম্বার জিজ্ঞাসা করেন বাবা কিংবা মা'র শেকড় কোথায়। তখন বলি যে নরসিংদী। এরপর আমাকে নরসিংদীর বিখ্যাত একজন ব্যক্তির নাম জানতে চাওয়া হয় যাকে নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি। তখন আমি আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মতিউর রহমানের নাম বলি। এরপর আমাকে মতিউর রহমানের শৈশব থেকে যুদ্ধে নামা পর্যন্ত স্তরে স্তরে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু আমার কেবল তাঁর জন্মস্থান, জন্ম-মৃ্ত্যুর তারিখ আর কিভাবে মারা যান এই অল্প কয়েকটা প্রিলিতে পড়ে আসা বিষয় বাদে আর কিছুই তেমন মাথায় ছিল না। পুরো ভাইভাতে আমার বিবেচনায় এখানেই আমার সবচেয়ে বড় ড্র-ব্যাক। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে জড়িত প্রত্যেকের জীবনের গল্পই আমাদের সবার জানা থাকা উচিত। এবং নিজ জেলা বা পৈতৃক নিবাসের হলে খুঁটিনাটি সবই ভাইভার আগে চোখ বুলিয়ে যাওয়া উচিত। তাই আপনাদেরকে আমি বলে রাখি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটির সময় নিজ জেলার বীরশ্রেষ্ঠদের সম্বন্ধে অবশ্যই একটু বেশি ভালো করে জেনে যাবেন। 


5. টানা ৪ টা প্রশ্নের উত্তরে "সরি স্যার" বলে যাওয়ার পরে ৫ম প্রশ্নের জবাবে "সরি স্যার" বলতে বিবেক কাজ করলেও আবেগ কাজ করে না। তাই বিবেক এবং আবেগের যৌথ প্রযোজনায় আপনার হরমোন ঠেলা দিবে খুবই উদ্ভট একটা উত্তর বের করার। আর প্রথমবার বিসিএস দিতে আসলে মনে হয় এটা বেশি হয়। মতিউর রহমানের সৈনিক জীবন নিয়ে করা টানা কয়েকটা প্রশ্নে আমি যখন কয়েকবার "সরি স্যার" বলি তখন প্রশ্নকর্তাও একটু প্রিটেনশাসভাবে আমার নার্ভের পরীক্ষা নিতে বলেই যাচ্ছিলেন "কিছুই তো জানেন না আপনি"। অতঃপর ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শুরুতে মতিউর রহমান কোথায় ছিলেন এটা জিজ্ঞেস করার পরে আমি নিজের অনুমানে একটা উত্তর দেই যেটা সম্পূর্ণ ভুল। এই কাজটা আমি পরের বিসিএসে আর রিপিট করি নাই। 


6. ভাইভার শেষদিকে আমাকে বলা হয় আজকের ভাইভার ভিত্তিতে নিজেকে নিজে মার্কস দিতে। আমি কস্মিনকালেও এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো ভাবি নি। আমাকে কয়েকটা ক্রাইটেরিয়া বলা হয় মার্কিংয়ের। যেমন আমি Patriotism এ ১০০ তে কত দিবো নিজেকে, Honesty & Integrity তে কত দিবো। এরকম আরো ৪/৫টা পয়েন্ট ছিল। আমার ইনটুইটিভ মাইন্ড বারবার বলছিলো যে আমি নিজেকে কিভাবে ইভ্যালুয়েট করি বা কত দেই ঠিক সেটার ভিত্তিতেই আমাকে তারা হয়তো মার্কস দিবেন। এবং এসব ক্ষেত্রে নাকি নিজেকে বেশি বেশি দিতে হয় যাতে নিজেকে নিয়ে নিজের কনফিডেন্স রেডিয়েট করে। কিন্তু আমি ২টা প্যারামিটার বাদে বাকি প্রত্যেকটাতে খুবই কম দেই নিজেকে। কারণ বেশি মার্ক দিলে হয়তো অ্যারোগেন্ট ভাবতে পারতেন তাঁরা আমাকে! এমনিতেও প্রথমবার ভাইভায় এটা বোঝা খুব টাফ যে ভাইভা কেমন হচ্ছে। ১১ নং সিরিয়ালে থাকার পরও ২২ মিনিট পার হয়ে গেলো মাঝে এতগুলা স্পীচ দিলাম, তার উপর আবার নতুন উপদ্রব এসব মার্কিংয়ের। আমি কিছুটা বেকায়দায় ছিলাম। এভাবেই বোর্ড টু বোর্ড কোশ্চেনিং স্টাইল এবং আপনার ডেলিভারি অনেক ভেরি করে। এটাই ভাগ্য।


7. সবশেষে ৪১ তম বিসিএসে আমার অন্যতম ভুল ছিল কথা বলার সময় বাংলা এবং ইংরেজীর মিশ্রণ। অনেকেই হয়তো কিছু শব্দ ইংরেজীতে বলে থাকে তবে আমার শুধু শব্দগুচ্ছ না, টানা ২-১টা বাক্যও ইংরেজিতে চলে এসেছিল। আমি হল থেকে বের হওয়ার সময় এক্সটার্নাল-১ আমাকে থামান, আমার উচ্চারণ এবং বাচনভঙ্গির প্রশংসা করেন, তবে সাথে এটা বলে দেন যে আমার কথায় খুব প্রবলভাবে নাকি ভাষার মিশ্রণটা কানে লেগেছে। তাই উপদেশ দেন ভবিষ্যতে কাজ করার ক্ষেত্রে যাতে এটা সবসময় মাথায় রাখি।


কোনোরকম রাখডাক না রেখে অবলীলায় সত্য ভাইভার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করলাম। বলে রাখি, আমি এখনও জানি না আমার ভাইভা অন্যদের সাথে তুলনায় আপ-টু-দ্যা মার্ক ছিল কি না। তবে নিজের সাথে নিজেকে তুলনা করলে বলতে পারি আমার ৪৩ ভাইভা > ৪১ ভাইভা। পরেরটায় ক্যাডার না পেলেও এটাই বলতাম, যেমন করে বলতে পারি ৪১ এর লিখিত ৪৩ এর চেয়ে অনেক ভালো ছিল যদিও প্রত্যাশা পূরণ হয় নি। 


৪১ এর অনেক ভুল ৪৩-এ শুধরে নিতে চেষ্টা করেছি। একটাও ইংরেজী শব্দ না বলে বাংলা বলেছি। আমাকে প্রশ্ন করেছিল "ফ্যামিলি প্ল্যানিং ক্যাডার" নিয়ে, আমি সতর্কভাবে প্রতিবার উত্তরে "পরিবার পরিকল্পনা" বলেছি। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে সাহসই করি নাই চেষ্টা করার। ৫০% এর বেশি প্রশ্নের উত্তরেই "সরি স্যার" বলে গিয়েছি। 


তবে ৪৩ এ প্রথম চয়েজ পেয়েছি বলে যে ৪৩ তম ভাইভাকে মাখ্খনের মতো ফ্ল-লেস দাবি করছি এমনটা না। দু-এক জায়গায় তোতলিয়েছি। অথেনটিকেশন মেথডে "ফায়ারওয়াল" বলতে গিয়ে "ফায়ারফক্স" বলে বলে টেকনাফ থেকে মান্দালপাড়া পর্যন্ত চলে গিয়েছি। তেঁতুলিয়ায় পৌঁছুনোর ঠিক একটু আগে বুঝতে পারি যে "ওয়াল" এর জায়গায় "ফক্স" বলেছি। এরপরে একগাল হেসে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে সংশোধন করি। আবার কোথায় যেন "তিনি বলেছেন" এর জায়গায় "তিনি বলেছে" বলেছি। একবার "সঠিক" শব্দটা বলার সময়ে উচ্চারণে "শ" এর পরিবর্তে "স" এর মত সাউন্ড করেছি। এসব ভুল ভাইভাতে টুকটাক হবেই। ভাইভা কখনো কারোরই শতভাগ শুদ্ধ হওয়া সম্ভব না। পত্রিকাতে বা গ্রুপগুলোতে আমরা যেই অভিজ্ঞতা দেখি সেখানে তো সামারিটা শুধু লেখা হয় আর কিছু না। প্রশ্নকর্তা কর্তৃক একটা আচমকা হাউরা কোয়েশ্চেন শোনার পরের ১০ সেকেন্ডের যে নীরবতা, খুব সহজ প্রশ্নে একবার আটকানোর পরে আমরা যে ভেড়ার মত অ্যা অ্যা করি, আমাদের মিসেলেনিয়াস শত শত ফল্টস - এই সবকিছু নিভৃত থাকে। আপনি সফল হলে সব "শ এ শ", ব্যর্থ হলে কেউ ন্যূনতম অ্যাপ্রিশিয়েটও করবে না। 


বিসিএস ভাইভা হলো ক্রিকেটের সুপার ওভারের মত। পূর্ণদৈর্ঘ্য বিচারে স্কোর সমান হলেও দশ মিনিটের সুপার ওভারে ইতিহাস বদলে যায়। কাজেই আপনার আগের অন্যান্য বিসিএসের তুলনায় ৪৪ তম লিখিত যত খারাপ হয়েছে বলেই নিজে নিজে মনে করে থাকেন না কেন, আমার মত "এত বাজে রিটেন দিয়েছি যে ২০০ তে ২০০ দিলেও আবার সেইম ক্যাডারই পাবো" জাতীয় ধারণা রাখেন না কেন - যেহেতু লিখিত পাশ করেছেন তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন ভাইভাতে একটা ছক্কা মারতে। সেটা জায়গায় থেকে হাটু গেড়ে বসে সুইপ শটে মারলে হয়তো যথেষ্ট নাও হতে পারে, তাই চেষ্টা করতে হবে ডাউন দ্যা উইকেটে এগিয়ে এসে খেলতে।


নন ক্যাডার লিস্টে ঝুলে কষ্ট পাওয়া এক জিনিস, কিন্তু 

একটা জেনারেল ক্যাডার পেয়েও আপনি যখন তথাকথিত ৪/৫টা ক্যাডারের মত সমানভাবে চারপাশ থেকে সমাদর পাবেন না সেটা আরেক তরিকার জিনিস। আপনি-আমি যতই বিশ্বাস করি যার যার রিযিক নির্ধারিত, "অন্যের সাফল্যে আমি সুখী হই" জাতীয় বুলি কপচাই কিন্তু বাস্তবতা হলো আপনি রক্ত-মাংসের মানুষ। আপনি কখনোই সহজভাবে প্রথম ধাক্কাটা নিতে পারবেন না। হয়তো কাউকে প্রকাশ করবেন না বা মুখে বলবেন না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা গ্রাজ কাজ করেই। এই গ্রাজ থাকা ভালো। তবে অবশ্যই পোশাকের আচ্ছাদনেই সেই ক্ষোভ লেপে রাখবেন, নাঙ্গা ঘুরতে দিবেন না সোশ্যাল গলির মোড়ে মোড়ে। 


৪১ থেকে ৪৩ এর ফলাফলের মাঝের ৪ মাস ২৩ দিন অনেক বড় একটা লার্নিং সেশন ছিল আমার। চুপচাপ হাসিমুখে লিখতে লিখতেও বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট বয়ে বেড়াতাম। আমার মধ্যে যে ক্ষুদ্রতা কাজ করতো সেটা কিন্তু কখনোই নিজের সুপারিশ পাওয়া ক্যাডার নিয়ে না, বরং ক্ষুদ্রতা ছিল নিজের গাটস নিয়ে। 


কারণ আমার মনে হয়েছিলো আমি শেষ চয়েজ পাওয়ার মত হয়তো পরীক্ষা দেই নি। এবং এই ধারণা আমার মধ্যে গেঁথে দিয়েছিলেন স্বয়ং আমার শিক্ষক এবং মেন্টররাই। 


হিউম্যান সাইকোলজি এমন যে আপনি সবখানে প্রশংসা পেলে প্রত্যাশাও সমানুপাতে বৃদ্ধি পাবে। নিজের ব্যর্থতাকে সহজে মেনে নিতে পারবেন না। এজন্যই হয়তো ইসলামে প্রকাশ্যে কারো ভূয়সী প্রশংসা করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির প্রশংসা করতে শুনে বলেন, ‘তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে বা তোমরা তার মেরুদণ্ড ভেঙে ফেললে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৬৬৩)


দিনশেষে সত্যিই সব ভাগ্য। যাকে খুশি আল্লাহ পাক সম্মানিত করেন। তারপরও শহুরে মিউনিসিপ্যাল এরিয়ার নাগরিকদের মতো আমরাও চেষ্টা করে যাই যাতে চাঁদের আলো জানালা দিয়ে না পারলেও অন্তত ভেন্টিলেটর দিয়ে ঘরে ঢোকে। মন থেকে দোয়া করি দিনশেষে যে যার সন্ধ্যার কাছে যে যার জ্যোৎস্নার কাছে ফিরে যাক। মনে রাখবেন প্রত্যেক গুল্মই একদিন বৃক্ষে পরিণত হয়, তবে ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন জমিতে।


📝 মালিহা সুলতানা 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম