আপ্নাকেই খুঁজছি আসলে এতদিন ধরে সাজেশান দেয়ার জন্য। গ্রেট কোয়েশ্চান, আপনি কিভাবে নিজেকে প্রিপেয়ার করবেন আগামির জন্য। যেহেতু আপনার কাছে ৪ বছর টাইম আছে আমরা এটাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করব।
তবে এর সাথে আমরা একটা জিনিষ মাথায় রাখব আপনার পড়ালেখা কন্টিনিউ করতে হবে এবং রেগুলার ভাল রেজাল্ট করে যেতে হবে।
# Core BBA Courses: আপনার পড়ালেখার মুল বিষয় গুলো নিয়ে জ্ঞান নিন খুব ভাল করে, প্রতিটি বই একদম পই পই করে পড়ে ফেলুন এবং নিজেকে খুব ভাল ভাবে ইউনির প্রফেসর দের কাছে তুলে ধরুন। একাডেমিক এ ৪.০ টার্গেট নিয়ে পড়ালেখা করবেন। এবং এমন ভাবে পড়বেন যাতে করে বুঝা যায় আপনি দুনিয়ার সব বাদ দিয়ে পড়াকেই আপন করে নিয়েছেন।
# Communication Skills: এটা খুব খুব দরকারি! এটাকে আমরা ৩ টা ভাগে ভাগ করব। স্পিকিং, রাইটিং এবং নেটওয়ার্কিং।
স্পিকিং এর জন্যঃ আপনি ডিবেট ক্লাবে এডমিশান নিন, ইউটিউবে রেগুলার পাব্লিক স্পিকিং ফলো করুন এবং প্রেজেন্টেশান দিতে থাকুন। ক্লাসের বা ইউনির যেকোন অনুষ্ঠানে রেগুলার কথা বলুন এবং বাসায় প্র্যাকটিস করুন। রেগুলার বেসিকে টিভি দেখুন, অন্যদের পডকাস্ট শুনুন এবং বন্ধুরা মিলে নিজেদের পছন্দের টপিকে একটা পডকাস্ট শুরু করুন একদম প্রথম থেকেই। প্রতি সপ্তাহে আপনারা র্যান্ডম টপিক নিয়ে কথা বলতে থাকবেন এবং মাথায় রাখবেন যাতে আলোচনা প্রফেশনাল হয়।
রাইটিংঃ খুবি দরকারি! প্রতিদিন নিউজপেপারে একটা করে বিজনেস নিউজ ধরবেন, হোক লোকাল বা গ্লোবাল এবং এরপর সেটাকে নিজের মত করে এক্সপ্লেইন করে লিখে ফেল্বেন, এবং সেটা ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে পাব্লিশ করা শুরু করবেন। আপনার যেই টপিক ভাল মনে হয়, এবং এটা বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই করবেন।
নেটওয়ার্কিংঃ ১/২/৩/৪ বছরের সিনিয়র দের সাথে কন্টাক্ট শুরু করেন এবং সমস্যা নিয়ে আন্তরিকতার সাথে যোগাযোগ করুন, ফেসবুকে কানেক্ট থাকুন। ফোনে মেসেজে কণ্টাক্ট রাখুন কাজে দিবে ইন ফিউচারে।
#English Language Skill: সবচেয়ে দরকারি স্কিল! বাংলা পেপার আর নিউজ পড়া ছেড়ে দিবেন একদম পুরোপুরি এবং ডেইলি ইকোনমিস্ট, ফোর্বস আর মিডিয়াম পড়ায় মন দিন, ডেইলি মিনিমাম ১ ঘন্টা ইংরেজি পড়বেন এবং বুঝার চেষ্টা করবেন আর অবশ্যই প্র্যাকটিস করবেন! মনে রাখবেন, আপনাকে গ্লোবাল মার্কেটে এগিয়ে থাকতে হলে অবশ্যই ইংরেজির মাস্টার হতে হবে এবং এটাই আপনার একমাত্র সম্বল আসলে।
# Technical and Digital Skills: এবার আসি আমাদের কাজের আলাপে।
১ম বছরঃ
শুরু করবেন business software (Microsoft Office) দিয়ে। ৬ মাস টাইম নিবেন, কোর্সেরা আর ইউটিউব থেকে এক্সেল আর পাওয়ারপয়েন্টের বস হয়ে যাবেন। অন্তত মাইক্রোসফট সার্টিফাইড এক্সপার্ট হয়ে যান। এটা খুব কাজে দিবে সাম্নের দিনে। সেই সাথে ওয়ার্ড, আউটলুক কাজে দেয়। গুগুলের খুব ভাল ভাল ফ্রি মাইক্রোসফট কোর্স আছে, কোর্সেরার অনেক হাই কোয়ালিটি কোর্স আছে, বাংলাদেশে অনেকেই শিখায়! শিখা শুরু করেন।
এবার শিখুন বেসিক ডিজাইন টুলস, এবং শুরু করেন ক্যানভা দিয়ে, ফ্রি ক্যানভা পাওয়া যায় স্টুডেন্ট দের জন্য। সেই সাথে ইলাস্ট্রেটার, ফটোশপের বেসিক কাজ শিখে নেন, টাইম নিবেন ৬ মাস। মাধ্যম? ইউটিউব ভাই ইউটিউব।
২য় বছরঃ
এডভান্স এক্সেল শিখবেন, পিভট টেবিল থেকে Vlookup কোন কিছুই বাদ দিবেন না, সেই সাথে বেসিক ডেটা এনালাইসিস টুলস এর কাজ শুরু করবেন, এস কিউ এল দিয়ে। ৬ মাস নিবেন, বাংলাদেশে আপনার চেয়ে বেস্ট এক্সেল আর কেউ যাতে না জানে।
পাইথন শিখবেন। এটা একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং খুব কাজের, স্পেশালি ডেটা এনালাইসিস সেগ্মেন্টে বেশ কাজে দিবে কদিন পর। ডেটা এনালাইসিস ফিল্ডে আনাগোনা করবেন আরো বেটার ভাবে।
৩য় বছরঃ
ডিজিটাল মার্কেটিং সেগ্মেন্টঃ গুগুল ডিজিটাল গ্যারেজ থেকে কোর্স শুরু করবেন শেখা। দুই তিন টা কোর্স করে ফেলেন, এরপর কোর্সেরা থেকে ২/৩ টা কোর্স করে ফেলেন। ৬ মাস লাগবে।
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টঃ এটা শিখার দিকে নজর দেন, বেশ কিছু টুলস শেখা লাগবে। জিরা, আসানা, মানডে থেকে শুরু করে মোটামুটি প্রচলিত সকল প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুলস জানতে হবে আপনাকে। সেই সাথে হাবস্পট তো একদম হাতের তালুর মত চেনা থাকতে হবে।
বিজনেস ইন্টেলিজেন্সঃ কোর্সেরা অথবা অন্য কোন সোর্স থেকে বিজনেস ইন্টেলিজেন্স এর উপর কিছু জ্ঞান নেয়া শুরু করেন।
৪র্থ বছরঃ একদম শুরু থেকে সিভি বানান, আর এপ্লাই শুরু করেন ফ্রি ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করার জন্য। কোথায় এপ্লাই করবেন? বাংলাদেশের ৫০ টা কোম্পানি টার্গেট করবেন এবং বিদেশের ৫০ টা কোম্পানি টার্গেট করবেন যেখানে আপনি ইন্টার্ন করতে চান। তাদের ইন্টার্ন হবার জন্য যা যা লাগে তা শুরু করেন ঘাটাঘাটী! দেখবেন ১০০ টা থেকে ১ টা লেগে গেছে! বিংগো! শুরু করেন কাজ।
# Leadership and Teamwork: ইউনিতে কোন প্রোগ্রাম হলে চেস্টা করবেন এগিয়ে যেতে, এতে করে নিজের লিডারশিপ সেন্স বাড়বে।
# Professional Development: দেশের যত বিজনেস নেটোওয়ার্ক ইভেন্ট আছে, যত সেমিনার পাবেন , বিজনেস রিলেটেড অংশ নেয়া শুরু করেন। টাইম ম্যানেজ করে জাস্ট এটেন্ড করেন এবং প্রশ্ন করা শুরু করেন, এটা কিভাবে হল, ওটা কিভাবে হল। আর মানুষ কে এপ্রোচ করা শুরু করবেন সাজেশান আর ফিডব্যাকের জন্য।
মেন্টর খুঁজে নিন! এই সময়ে এসে দরকার একজন দক্ষ মেন্টরের যিনি আপনাকে সাজেশান দিবে সঠিক পথের এবং নিজে টেনে তুলবে। এমন কাউকে খুঁজে বের করুন।
মনে রাখবেন, এই ৪ বছর আপনার আসল সময়, এবং এটাকে খুব দরকারের সাথে দেখতে হবে আপনাকে, একদম হেলা করা যাবেনা এবং এটাকে ফুল টাইম প্রফেশন হিসেবে চিন্তা করতে হবে।
আমাদের বাংলাদেশের এজুকেশান সিস্টেম , কারিকুলাম এবং ইন্ডাস্ট্রি ম্যাচিং নেই, ফলে যা পড়ি বা শিখি তা কাজে লাগাতে পারিনা, ফলে আমাদের চিন্তা আমাদের করতে হবে কারো জন্য অপেক্ষা করতে হবেনা। পাশ করলেই চাকুরি এটা ভুলে যান, মাথায় রাখবেন স্কিলডঃ হলেই সফল হবেন নাইলে বাসা ভর্তি সার্টিফিকেট আর সম্মান নিয়েও বেকার থাকবেন। এখন সিদ্ধান্ত আপনার হাতে।
নিজের জীবন নিজেই গড়বেন! সময় এখন আপনার , দুনিয়াকে জয় করার জন্য লেগে যান!
মনে রাখবেন, থার্ড ইয়ার শেষ হবার আগে কোথাও ইন্টার্নের জন্য এপ্লাই করবেন না, আপনার আগে নিজের স্কিল গড়ে তুলেন, এরপর দেখবেন আপনাকে পাবার জন্য মানুষ লাইন দিবে। আমি এমন অনেকে ছেলেকে চিনি যারা পাশ করার সাথে সাথেই জব পেয়ে গেছে কারন তারা স্কিল্ড এবং সেটা প্রকাশ করতে পেরেছে যায়গামত এবং সময় মত।
আই উইশ ইউ অল দা বেস্ট
📝 Mahamudul Hasan Masum