২০০৭ সালে যখন বাংলাদেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করা হয় তখন দুই রকমের ম্যাজিস্ট্রেট তৈরি হয় যেমন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
জজ এবং ম্যাজিস্ট্রেট দুজনই বিচারক এবং দুজনেরই বিচারিক ক্ষমতা রয়েছে। তবু জজ এবং ম্যাজিস্ট্রেটে মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত ২টি সরকারি পদ। উভয়ের কাজের কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্র রয়েছে। যদিও ম্যাজিস্ট্রেট বলতে সাধারণত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝায় (ফৌজদারি কার্যবিধির (২০০৭ সালে সংশোধিত) ৪ক ধারা)।
কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (CrPC), ১৮৯৮ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দুই শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে যথা: (ক) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং (খ) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। উভয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া, পদ এবং বিচারিক কার্যক্রমে ভিন্নতা রয়েছে। নিম্মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রধান পার্থক্য সমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করা হল।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কারা?
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলতে সে সকল ব্যক্তিকে বুঝায় যে সকল ব্যক্তি আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা করে না বরং তারা ভ্রাম্যমান আদালত বা Mobile Court এর মাধ্যমে তারা তাদের বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকেন। এর উদাহরণ বলা যায় TNO এবং UNO। সুতরাং TNO এবং UNO কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলা যায়। বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেট। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস (প্রশাসন) এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্তরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা লাভ করে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাইলে করনীয়: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাইলে যেকোন বিষয়ে Honours পাশের পর BCS পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হতে হবে।
সরকার চাইলে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদেরকে সীমিত আকারে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে ((ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১০(৫))। তারা সাধারণত তাদের নিজ নিজ এখতিয়ারে নির্বাহী এবং সীমিত বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কারা?
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বলতে সেসকল ব্যক্তিকে বুঝায় যারা আদালতে বিচার কার্য পরিচালনা করে থাকেন যাদের কে আমরা জজ বা Judge বলে থাকি। বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলো যারা সব ধরনের ফৌজদারি মামলার বিচার করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর বিচার বিভাগে নিযুক্ত ফৌজদারি বিচারকার্য পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদেরকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার উপায়: জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হতে হলে HSC পাশের পর LLB বা আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে ও পাশ করতে হবে। এবং পরবর্তীতে Bangladesh Judicial Service Commission কর্তৃক আয়োজিত BJS Exam এ উত্তীর্ণ হতে হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর মধ্যে পার্থক্য:
একজন জজের অবশ্যই আইনের উপর ডিগ্রি থাকে তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আইনের উপর কোন ডিগ্রি থাকতেই পারে নাও পারে।
জজ বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অন্যতম পার্থক্য হলো জজ একজন আসামিকে মৃত্যুদন্ড বা যাবতজীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সে ক্ষমতা নেই।