চাকুরির প্রস্তুতি শুরুর পূর্বেই ভাবুন :
চাকুরিতে প্রবেশ করার পূর্বের সবচাইতে কঠিন ও অনিশ্চয়তায় ভরপুর ধাপটি হলো প্রস্তুতি-পর্ব। বিগত ১৫/১৬ বছর কিংবা তারও অধিক সময়ে যা কিছুই শিখেছেন তার সাথে আরও অধিক তথ্য-উপাত্ত, জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন-ইতিহাস ইত্যাদি যোগ করে শাণিত ধার নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার মহাযজ্ঞে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন আপনি। এটি এমনই এক কুরুক্ষেত্রের মহাপ্রান্তর যেখানে কেবল যোগ্যতমরাই টিকে যায়, আর অন্যরা হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অতলে। অল্পকিছু সৌভাগ্যবানদের পরিশ্রম সাফল্যমন্ডিত হয়ে অপরের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়, অধিকাংশের পরিশ্রম ঢাকা পড়ে যায় কালো রাত্রির খামে। তাই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের এই মহাক্রীড়াযজ্ঞে নিজেকে সঁপে দেয়ার পূর্বে আপনার নিজের সাথে নিজের একটি বোঝাপড়া করে নেয়া খুবই জরুরি৷
জীবনে সফল হবার জন্য সরকারি চাকুরি একটি অন্যতম উপায় মাত্র, একমাত্র কখনোই নয়৷ আপনার ভেতরে যদি উদ্যোক্তা হবার দুর্দমনীয় স্বপ্ন থাকে তবে এই পথে আপনার না-আসাই উচিত৷ আপনার যদি উচ্চতর শিক্ষা লাভ করে দেশের সেবায় অবদান রাখার সুযোগ থাকে, তবে আপনিও এই পথে আসার আগে দু'বার ভাবুন। যদি নিজের পরিবারের ইতোমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা থাকে অথবা এমন সুযোগ থাকে যে আপনি অন্তত মুষ্টিমেয় বেকারের কর্মসংস্থানের যোগান দিতে পারেন, তবে আপনারও উচিত হবে না এই পথে আসা৷ যদি দ্রুততম সময়ে সীমাহীন বৈভব উপার্জনের কোনো বিশেষ কৌশল আপনার জানা থাকে, তবে অযথাই আপনি এই অনিশ্চয়তায় নিজেকে ঠেলে দেবেন না। আর যারা আমার মতো অনন্যোপায়, একটি সরকারি চাকুরি ভীষণ প্রয়োজন তারা এই পথে আসতেই পারেন৷ সকলের মতন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান আপনার জন্যও সেই সুযোগটি দিয়েছে৷ তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আগে অন্তত কয়েকবার ভেবে নিন, দিনের পর দিন এই অনিশ্চয়তায় ভরা কঠিন সংগ্রামের পথে আপনি টিকে থাকতে পারবেন তো? আশেপাশের মানুষের হাজারো কটূক্তি, পরিবারের অসহযোগিতা ইত্যাদি সহ্য করে, প্রিয়জন হারিয়ে, একাকী দীর্ঘ শ্বাপদসংকুল পথে দীর্ঘকাল হেঁটে যেতে যদি না-পারেন তবে এই পথে এসে আপনি ভুল করবেন৷
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই— সাত বছরের প্রেমিকার বিয়ের দিন সন্ধ্যায় পুরোনো ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদকীয় পড়তে পড়তে আমাকে বলেছিলেন, "বুঝলি ছোটোভাই, লাবণ্যর (ছদ্মনাম) বিয়েতে দাওয়াত ছিল আজ, কিন্তু কিছু একটা কিনে নিয়ে যাবো সেই টাকাটা যোগাড় করতে পারিনি বলে দাওয়াত খেতে যাইনি।" ভাই তখনও ছত্রিশতম বিসিএসের লিখিত দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ক্যাডারও হয়েছেন। এক সন্তানের বাবা হয়েছেন। লাবণ্যদির কথা ভুলে গেছেন কিনা জিজ্ঞেস করলেই হাসিমুখে বলেন- "শুনেছি, ও বেশ ভালোই আছে!" আর এক ভাই ( বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি) ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রেমিকার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি চাপা আক্ষেপে দূর আকাশে করুণ দৃষ্টি মেলে কাঁপাকাঁপা গলায় প্রত্যুত্তর করেছিলেন "ওকে ছয় মাস হলো বিয়ে দিয়ে দিয়েছি!" আমরা সফল মানুষদের সাফল্যটুকুই শুধু দেখি, দেখি না কখনও এর পেছনে তাদের কত মূল্য দিতে হয়েছে। আপনিও সেই সফলদের একজন হতে চলেছেন, সেই পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে তৈরি আছেন তো?
#BCSCustoms
#BCSAdministration